আজ বৃহস্পতিবার, ২৫শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দেওভোগে মাদক দ্বন্দ্বে খুন বেড়েছে

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

শহর লাগোয়া দেওভোগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড যেমন রয়েছে তেমনি কাশিপুর ইউনিয়নের এলাকাও আছে। বছরের শুরু থেকে ইউনিয়নের আওতাভুক্ত গ্রামগুলোতে খুনাখুনি শুরু হয়েছে। শুক্রবার রাতে দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় সর্বশেষ খুনের শিকার হয়েছে একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। সব ক’টি খুনের ঘটনায় ঘুরেফিরে মাদকের বিষয়টি সামনে আসছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, মাদক নির্মুলে প্রশাসনের নেয়া কৌশল কি ভেস্তে যাচ্ছে। অপরদিকে কাশিপুর ইউনিয়নের দেওভোগে অপরাধ এত বাড়ছে কেন।

শুক্রবার রাতে দেওভোগে অপু নামে এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বত্তরা। রাত সাড়ে ৯ টায় শহরের দেওভোগ নাগবাড়ি এলাকায় তাকে খুন করা হয়। নিহত সোলেয়মান হোসেন অপু (৩২) দেওভোগ তাঁতিপাড়া এলাকার রমজান আলীর ছেলে। সে শহরের কাশেম ডেকোরেটরে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি’র কাজ করতো। একটি বিয়ের বাড়ির কাজের জন্য রাতে বাসা থেকে বের হলে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাকে ছুরিকাঘাত করে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে তাকে স্থানীয় লোকজন নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ সুমন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া পারভেজ কে গ্রেপ্তার করেছে। রাতে ফরহাদ নামে আরো একজনকে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয় পুলিশ। জানা যায়, নিহতের স্ত্রী জানায়, এলাকার বৈদ্যুতিক কাজ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল অপুর সাথে অন্যদের। বাতির কাজের কথা বলে অপুকে ফোন করে নিয়ে যায়। নিহত অপুর মায়ের দাবি ফয়সাল নামের এক যুবক তাকে জানিয়েছে, পারভেজের ভাগিনা রায়হান তাকে হত্যা করতে পারে। সূত্র মতে’ নিহত অপুও মাদকাসক্ত ছিল। তবে ফতুল্লা পুলিশ জানিয়েছে, মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বের কারনে অপুকে হত্যা করা হতে পারে। গতকাল নিহত অপুর পিতা বাদি হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গত ২৮ জুলাই শহররে দেওভোগ এলাকায় ছুরিকাআঘাতে শাকিল (৩৫) নামে এক যুবক খুন হয়। আহত হয় আরও পাঁচজন। নিহত মোটরসাইকেলের হেডলাইটের আলো চোখে পড়ার অজুহাতকে কেন্দ্র করে তাকে চাপাটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে স্থানীয় সূত্র ও পুলিশের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, হত্যারীদের সাথে শাকিলের আগে থেকে মাদক নিয়ে সংঘাত ছিল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মিজানুর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃত বুলেট আদালতে দায় স্বীকার করে বলেছে সে ইয়াবা ব্যবসায়ী তুহিনের বডিগার্ড হিসেবে কাজ করতো। বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা দিতো এবং ইয়াবা বিক্রির টাকা কালেকশন করতো।

২৭ জানুয়ারি দেওভোগ মাদরাসা এলাকায় দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে আলমগীর নামে এক যুবকে। তাকে হাসপাতালে নেয়ার পর সে মারা যান। সে মাদক ব্যবসার জেরে বন্ধুদের হাতে খুন হয়। নিহত আলমগীর পুলিশের সোর্স ছিল এবং বিসিকে বিভিন্ন গার্মেন্টে সাব কন্ট্রাকের কাজ করতো। ঘটনার কয়েকদিন আগে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ডেভিডসহ আরও কয়েকজনকে পুলিশে ধরিয়ে দেয় আলমগীর।

সচেতন মহলের মতে, সমাজে মাদক যেভাবে চেপে বসেছে তাতে করে নানা অপরাধের পরিমাণ বেড়ে গেছে। মাদক বিক্রেতা যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে মাদকসেবীও। মাদকের পেছনে থাকা গডফাদাররা নিত্য নতুন কৌশল করছে। সেসব কৌশলের কাছে প্রশাসন কখনও কখনও পরাজিত হয়। আর সে সুযোগ নিয়ে এলাকায় আধিপত্য ও ব্যবসার সুবিধায় দিন দিন বাড়ছে মাদক দ্বন্দ্ব।

বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, সব অপরাধে মাদক বিক্রি মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদক বিক্রি বন্ধ করতে পারলে হত্যাকান্ডও কমে আসবে। মাদক বিক্রির সাথে অনেক রাজনৈতিক নেতাও জড়িত। পুলিশের মধ্যে অনেকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাহলে মাদক বন্ধ করবে কে ? মাদকের দ্বন্দ্বে খুন করা হচ্ছে। কেউ মাদকের বিরুদ্ধে গেলে তাকেও মেরে ফেলা হচ্ছে। তার মতে, মানুষ সচেতন না হলে এসব বন্ধ হবে না।

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আসলাম হোসেন বলেন, অপু হত্যার তদন্ত চলছে। মাদক কে কেন্দ্র করে শাকিলকে হত্যা করা হয়েছে। মাদক কে কেন্দ্র করে হত্যা কান্ড সংঘঠিত হচ্ছে। তবে সব ঘটনায় পুলিশ আসামীদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে। পলাতকদের ধরতেও পুলিশ তৎপর রয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ